Family & Parent
যে শহরে তোমরা নেই। সেই শহরে আমি আর ফিরবো না। বাবা-মায়ের জন্য কিছু করতে পারলাম না। যতদিন বেঁচে আছি ততদিন এই কষ্টটা থেকেই যাবে। ছেলে মানুষ বড়ো হওয়ার পর,অনেক কিছুই তাদের পরিবারের সাথে কখনোই শেয়ার করতে পারে না। আমিও এমন একজন,যে কি না কিছুই বলতে পারি নাই, এমনকি কোনোদিন আর বলার জন্য তাদেরকে পাবো না। কেনই বা তোমাদের থেকে দূরে ছিলাম বিগত কয়েক বছর। উপরওলার কিসের এতো তাড়া,যে আমার কাছ থেকে তাদেরদেরকে আমার আগেই এই পৃথিবী থেকে নিয়ে গেলো।
আমার নিজের ভুলের জন্য তাদের (পরিবারের সবাইকে) ক্ষুন্ন করেছি অনেকবার। সব মিলিয়ে আমি যেমনটা চেয়েছি তেমনটা কোনোদিন তাদেরকে দিতে পারিনি। কিছুদিন আগেও আমার ছোট একটা ভুলের জন্য ডাক্তার ভাই আর পরিবারের মোশারফের সাথে যেই সিনটা করতে বাধ্য হলাম। তোমাদের সামনে এসে দাঁড়ানোর মত, মেরুদন্ডটা আমার আর নেই।
আমিও মানুষ। তোমাদের সাথে আমারও সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তোমাদের কাছ থেকে দূরে থাকি নাই। সব কিছু আমার জন্য হয়েছে তাই সবকিছুর অবসান দিয়েই ফিরতে চেয়েছিলাম। বাবা-মা,দুইজনই আমার খুব অসময়ে চলে গেলেন।
২০১৯ সালে আমার একটা প্রব্লেমের জন্য, প্রথমভাবের মতো ঢাকাতে একা ঈদ করি। সেই বছরের ০২/১২/২০১৯ তারিখ সোমবার রাতে,বাবা'র অসুখ হয়েছিল। হসপিটালে তার সাথে পুরো সময়টা ছিলাম,কিন্ত তাকে এক সেবা করা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। সে একটু সুস্থ হওয়ার পর বাড়িতে ঠিকই গিয়েছিল। তারপর চলে গেলেন ১৬/০৬/২০২০ তারিখে আল্লাহর ডাকে। সেই থেকে প্রতিটিদিন একান্তই আমার শূন্যতার দিন।
পুরোনো স্মৃতি ভিড় করে বাবা'র । বারবার আমার ইচ্ছে করে হয়ে যায় মৃত্যুযাত্রী।
ভেবেছিলাম হয়তো মায়ের জন্য এই ক্ষুদ্র জীবনে কিছু করতে পারবো, তাও আল্লাহ করার সুযোগ দিলেন না। তার আগেই উপরের মালিক আম্মা'কে নিয়ে গেলেন বাবা'র কাছে। বাবা পরকালে চলে যাওয়ার পর থেকেই, মা অনেক ভেঙে পড়েছিলেন। আম্মা'র ডায়াবেটিক থাকায় একটু দুর্চিন্তা করলেই প্রায়ই অসুস্তহ হয়ে যেতেন।
গত নভেম্বর ২০২২ এর দিকে আম্মু অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তার পাশে এক মুহূর্তের জন্যও থাকতে পারিনি। আম্মা'র জন্য প্রতিটা মুহূর্ত দোয়া করেছি। কিন্তু আল্লাহ তাকেও খুব তাড়াতাড়ি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছেন। ০১/১২/২০২২ ইং তারিখে আম্মু'কে হারিয়ে ফেলি।
আমি হলাম, এমন এক ক্ষতভাগা ছেলে,মায়ের মৃত্যর সংবাদটাও পাইনি। আমি ঢাকার বাহিরে কাজে এসেছিলাম,আমার কাছে ফোন ছিল না, একবারে নেটওয়ার্কের বাহিরে ছিলাম। ভেবেছিলাম ঢাকা গিয়ে একটা স্মার্ট ফোন কিনবো। আমার সবকিছু টাঙ্গাইলের রাজুর কম্পিউটারে লগইন করা ছিল। টাঙ্গাইল আসার পর থেকে।
আমি বাহিরে থাকলেও সবকিছুতে অনলাইনে দেখাইতো। পরে বুঝতে এবং জানতে পারলাম। রাজুর ল্যাপটপ সব-সময়ই অন'ই থাকতো। এইটা আমার জীবনের আরেকটা অনেক বড় কষ্ট, মায়ের শেষ বেলায় থাকতে পারি নাই। এ যেন ক্লান্তিময় জীবন আমার। সারাক্ষণই মনে হয় কী যেন নেই। বাবা-মায়ের আর পরিবারের সবার চিন্তা করেই রাত কেটে যায়। ঘুমহীন তাদেরকে প্রতিটি মুহূর্ত মনে পরে। আমি একেবারেই ঘুমাতে চাই। হে আল্লাহ আমাকে সারাজীবনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দেও। দেখতে চাই না আর সূর্যটা।
বাবা-মা'হীন কেমনে যাবে আমার সময়,সেই প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খায় মনে প্রানে। অসীম এক স্তব্ধতা প্রতি মুহুর্তেই গ্রাস করে রাখে মন-প্রাণ। কাঁদতে চাইনা তারপরও বারবার ভারি ভারি অশ্রু বিন্দু এসে চোখ দুটোকে ঝাঁপসা করে দিয়ে যায়। দোয়া করি আমাকেও যেন তোমাদের কাছে খুব শীগ্রই আল্লাহ নিয়ে যায়। তবু জীবন থেমে নেই বিরামহীন ছোটে।
তারপরেও প্রত্যাশা পূরণের আশা,স্বত:স্ফূর্তভাবে নিজের কাজটিতে মনোযোগ দেয়া, কিংবা স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হওয়া এসব আর আগের মত হয়ে উঠে না কোনভাবেই। কাছের প্রিয় মানুষগুলো যখন সবাইকে ছেড়ে চিরতরে অনন্তলোকে যাত্রা করেন তখন জীবনের প্রাণ চাতুর্য সবসময় মানুষকে উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত রাখতে পারে না। সব আনন্দই উপভোগ করা সম্ভব হয় না। অজানা এক শূণ্যতা সারাক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখে নিজেকে। আমি সেই পরিস্থিতির শিকার। দোয়া করি,যেন বাবা-মা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বসবাস করেন। এটাই আল্লাহর কাছে একমাত্র চাওয়া।
আসলে সন্তানদের জীবনে বাবা-মায়ের আসন হৃদয়ের সবটা জুড়েই। যাদের বাবা-মা বেঁচে আছেন তারা নি:সন্দেহে সৌভাগ্যবান,পৃথিবীতে চিরসুখী মানুষ। আমি সেই সৌভাগ্যবঞ্চিতদের দলে। আমাদের পরিবারে সবাই যার যার অবস্থানে সচল ঠিকই হয়ে উঠবে একদিন। কিন্তু সেই সুখের সময় বাবা-মা আমাদের মাঝে থাকবে না। তাদের শুণ্যতা আমরা কোনভাবেই পূরন করতে পারবো না ।
বাবা-মায়ের স্মৃতি ভাসছে চোখে। বাবা-মা আমাদের মাঝে নেই ভাবতে বড় কষ্ট লাগে। আমি তাদেরকে তাদের যোগ্য মর্যাদা দিতে পারিনি। সে অপরাধবোধ আর অপারগতার জন্য ক্ষমা চাওয়া ছাড়া এ মুহুর্তে আর কি বা করার আছে? পারলে ক্ষমা করো বাবা এবং মা।
তোমাদের উচ্ছ্বাসময় হাসি আর চোখে পড়বে না। নানা প্রতিকূলতায় আশার বাণী শোনাতে। তোমরা বড্ড সরল মনের মানুষ ছিলে। কারণে-অকারণে কত না কষ্ট দিয়েছি তোমাদেরকে। নি:স্ব-নি:সঙ্গ তোমাদেরকে কখনোই শান্তি দিতে পারিনি,হয়তবা জীবনভর শুধু উৎকণ্ঠা আর সীমাহীন দু:শ্চিন্তায় কেটেছে তোমাদের অনেকটা সময়। বলতে দ্বিধা নেই,সন্তান হিসেবে আমি গর্বিত। দূর থেকে দোয়া করো,যেন সব অশুভ অকল্যাণ আমাদের স্পর্শ না করে। পারিবারিক বন্ধন যেন আরও সুদৃড় হয়।
প্রত্যেকে যেন প্রত্যেকের ওপর নির্ভর হতে পারে, যা তোমরা সারাজীবন চেয়েছিলে। পরিশেষে বলতে চাই দেখা হবে খুব শীগ্রই পরকালে।
Comments
Post a Comment